মৌলভীবাজারবাসী রবীন্দ্রনাথকে বুকে ধারণ করেছিল। তাঁর ঋণ শোধেরও চেষ্টা করেছিল নানাভাবে। রবীন্দ্র প্রয়াণের পর বিশ্বভারতী কঠোর অর্থকষ্টে পড়ে যায়।
এমতাবস্থায় রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দূত হিসেবে অনিলকুমার চন্দ ১৯৪৬ সালে মৌলভীবাজার আসেন অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে। তাঁর আদি নিবাস হবিগঞ্জে। তখন মৌলভীবাজার মহকুমা প্রশাসক ছিলেন সি আর বি বাগাইওয়ালা (কার্যকাল : ১৩ নভেম্বর ১৯৪৫-০৫ অক্টোবর ১৯৪৮)। তিনি জাতিতে পার্সি ছিলেন। তবুও রবীন্দ্রনাথ ও বাঙালির প্রতি তিনি দরদ দেখিয়েছিলেন।
অনিল চন্দের আহবানে সাড়া দিয়ে রবীন্দ্রপ্রেমী বাগাইওয়ালা সারা মৌলভীবাজার চষে সে আমলে সংগ্রহ করেছিলেন প্রায় ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা। এই টাকা সাধারণ মানুষের দেওয়া একপ্রকার গণচাঁদা বলা যায়। এই টাকা দিয়ে বিশ্বভারতীর পুরাতন শিক্ষা ভবনে নতুন ছাত্রাবাস গড়ে ওঠেছিল। যা এই জেলাবাসীর জন্য গর্ব ও রবীন্দ্রপ্রাীতির ঋণ শোধের প্রাথমিক প্রচেষ্টা। আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের সিলেট আগমনের শতবর্ষপূর্তিতে এই জেলাবাসী তাঁকে একবিন্দু ভুলেনি।
রবীন্দ্রনাথকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে মৌলভীবাজার ও সিলেটবাসী। বর্ণাঢ্য আয়োজনে কুলাউড়ায় রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণের শতবর্ষ উদযাপন করা হয়। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ মৌলভীবাজার রবীন্দ্রনাথের সিলেট ভ্রমণের শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া সিলেটে চলছে সপ্তাহব্যাপী আয়োজন।
তথ্যসূত্র:
১. মুরারিচাঁদ কলেজ ম্যাগাজিন, ১৯১৯ [শ্রীহট্টে রবীন্দ্রনাথ, যতীন্দ্রকুমার পাল চৌধুরীর স্মৃতিচারণ]
২. সুধীরেন্দ্রনারায়ণ সিংহ, শ্রীহট্টে রবীন্দ্রনাথ, কবি প্রণাম, শ্রীহট্ট, ১৯৪১ [তিনি সেদিন কবির সাথে কুলাউড়া রেল স্টেশনে রাত্রিযাপন করেছিলেন]।
৩.মহাযাত্রার পথে, শারদামঞ্জরী দত্ত, পরশপাথর সংস্করণ, ১৩২০ বঙ্গাব্দ, পৃ. ১২৬-১২৭
৪. অমিতাভ চৌধুরী, একত্রে রবীন্দ্রনাথ, ২য়খণ্ড, দেজ পাবলিশার্স, ২০১৫, পৃ.২৭৯
দীপংকর মোহান্ত, লেখক ও গবেষক